নিজস্ব প্রতিবেদক : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের উদ্দীপন বিদ্যা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৭ সালে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। শিক্ষকেরা পাঠদানে মনোযোগী হলেও শিশুদের মানসিক বিকাশে বিষয়গুলোতে বেশ উদাসীন। যেন আলোর পিঠে অন্ধকার। তিনতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয়টিতে পাঠদানের রুমগুলো বেশ সাজানো গোছানো। পাঠদান পদ্ধতি এবং শ্রেণি কক্ষগুলো সবার নজর কাড়বে। যেন আলোকিত সব; কিন্তু পাশাপাশি বিরাজ করছে অন্ধকার।
বিদ্যালয়ের সামনের শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং বিনোদনের জন্য খেলার মাঠটি রয়েছে ময়লা আবর্জনা আর পানিতে নিমজ্জিত। যেন ডেঙ্গু মশার আবাসস্থল। আর বর্ষা ও বৃষ্টির মৌসুমে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের বারান্দা থেকে নামার উপায় নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাই বাধ্য হয়েই ক্লাসরুমের মধ্যেই থাকতে হয় তাদের। এছাড়া বিদ্যালয়ের সঙ্গে রয়েছে একটি শহিদ মিনার। শহিদ মিনারের চর্তুপাশে গাছ-গাছালি নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে।
বর্ষার দিনে যেন সাপ-বিচ্ছুর অবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তার সাথেই রয়েছে ছোট্ট একটি কৃষি বাগান। সেটিতেও আগাছায় জঙ্গলে রূপ নিয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠটিতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা খেলা কিংবা শারীরিক চর্চা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার ভালো ব্যবস্থার পাশাপাশি খেলার মাঠ, শহিদ মিনার অঙ্গনসহ সার্বিক বিষয় খেয়াল রাখার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্শন করেন অভিভাবক ও সচেতন মহলের ব্যক্তিরা। বিদ্যালয়টিতে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৭ জন শিক্ষক থাকলেও পাঠদান করে থাকেন প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন। দুই শিক্ষকের মধ্যে একজন বদলি এবং একজন ট্রেনিংয়ে রয়েছেন বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এদিকে উপজেলার ছোন্দাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ থাকলেও শিক্ষার্থী স্বল্পতায় ভুগছে বিদ্যালয়টি। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের উদাসীনতার কারণে অন্য শিক্ষকরাও ঢিলেঢালাভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা ও পাঠদানের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৭৮ জন। এর মধ্যে উপস্থিত থাকছে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ জনের মতো। বিদ্যালয়টিতে কোনোভাবেই শিক্ষার্থী বাড়ানো যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র দুইজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। সকাল ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক মির্জা নাসরিন নাহার বিদ্যালয়ে আসেন। দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, তার ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে তাই বিদ্যালয়ে আসতে বিলম্ব হয়েছে। অন্য শিক্ষকরা সকাল সোয়া ৯টার পর একে একে আসতে থাকেন।
শিক্ষকদের উদাসীনতার মাঝে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বিলম্বে আসে। গ্রামের বিষয় বলে তারা এভাবে আসে বলে জানান এক শিক্ষক। এ বিদ্যালয়ের মতো উপজেলার মোট ৯৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের অবস্থা নাজুক। শিক্ষকদের পাঠদানে অমনোযোগী, ক্লাসে বিলম্বে উপস্থিতিসহ চলছে নানা সমস্যা।
বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানে শ্রেণিকক্ষ ভালো থাকলেও শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হাতেগনা কয়েকটি বিদ্যালয় বাদে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকদের উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে।
বিদ্যালয়ে সময়মতো শিক্ষকদের উপস্থিতি, পাঠদানে শিক্ষকদের অমনোযোগী, সময়মতো পতাকা উত্তোলন, সকালে হাজিরা দিয়ে অনেক শিক্ষক নানা বাহানায় স্কুল ত্যাগ, স্লিপ প্রকল্পের টাকা সঠিক স্থানে ব্যয় না করে আতত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ে সততা স্টোর থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে নেই তার অস্তিত্ব। এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট ৯৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ভালো থাকলেও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে শিক্ষকদের পাঠদানে অনীহার চিত্র ফুটে উঠেছে। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা নানা বাহানায় স্কুল থেকে বাইরে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে মধুখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পরিদর্শন কর্মকর্তা হিসেবে আমরা বিদ্যালয়গুলোতে সার্বিক নজরদারি করে থাকি। চরাঞ্চলের গয়েশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক গিয়ে থাকতে চান না। তাছাড়া সেইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাও আসতে চান না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যে বিদ্যালগুলোতে সমস্যা রয়েছে তার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।
উপজেলার উদ্দীপন বিদ্যা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাটের জন্য দেড় লাখ টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলে অচিরেই স্কুলটির সমস্যা সমাধান করা হবে।