অনিক ঘোষ ,(বীরগঞ্জ-কাহারোল),দিনাজপুর : আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর কিছুদিন পরেই দোলায় আসছেন দেবী দুর্গা যাবেন ঘটকে।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন এই মহোৎসব।
চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ উৎসবকে ঘিরে ঘরে ঘরে দেবীদুর্গার বইছে আগমনী বার্তা। সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠ্যাদী কল্পারম্ভ বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পরদিন ১০ অক্টোবর সপ্তমী তিথিতে নব পত্রিকা প্রবেশন্তে সপ্তমী বিহিত পূজা। ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও সন্ধী পুজা। ১২ অক্টোবর মহানবমী পূজা এবং ১৩ অক্টোবর দশমী বিহিত পুজান্তে দর্পন বিসর্জন।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, যেন দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। সু নিপুণ হাতে মাটি ও রংতুলির ছোঁয়ায় দেবীকে রাঙিয়ে তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা। কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা হচ্ছে দেবীদুর্গার প্রতিমা। কারিগররা প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাঁদা তৈরি করছেন, কেউ কাঁদা থেকে হাত-পা বানাচ্ছেন। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও বাবার কাজে সহযোগিতা করছে। বছরের এ সময়টায় কাজের চাপ বেশি থাকায় বসে নেই গৃহিণীরাও। মাটি দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন কারুকাজময় অলঙ্কার। আর সেই অলঙ্কার প্রতিমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন অনন্যা রূপে।
জানা গেছে, এবার উপজেলায় বাসন্তী পূজাসহ ১৬৩ টি মন্ডপে পূজা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে কমতে পারে এর সংখ্যা। তবে দ্রব্য মূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন মিৎশিল্পীরা।
মৃৎশিল্পী কৌশলা রানী পাল বলেন,আমাদের বংশ পরম্পরায় অনেক বছর যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি।গত বছরের চেয়ে এ বছরে মজুরি অনেক কম তারপরও উপায় নাই কারণ এই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে এই দুর্গা প্রতিমার।কারণ ঘুনিয়ে এসেছে দুর্গা পূজা। ২০ হাজার টাকায় প্রতিমা বানাচ্ছি। প্রকারভেদে আরো কম দামে বানাচ্ছি।
আরেক প্রতিমা কারিগর জয়দেব পাল বলেন, গতবারের তুলনায় এবারে কাজ খুব কম। অর্ডার আসা শুরু করে কিছুদিন আগে থেকে কিন্তু ৫ দিন ভারী বর্ষণের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না,প্লাস্টিক ঢাকা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।কোন বড় জায়গায় নেই আমাদের।রাত-দিন পরিশ্রম করে অর্ডার নেওয়া প্রতিমা গুলো ঠিক সময়ে যাতে বুঝিয়ে দিতে পারি।কাজের মজুরি এবার তেমন একটা নেই বললেই চলে।তিনি এও বলেন আমি প্রতিবারে ৩ থেকে ৫টা প্রতিমা তৈরি করে থাকি। এবার দেশের পরিস্থিতির কারনে কমে গেছে, এবার ২টার কাজ করছি। ৭৫ হাজার টাকার প্রতিমা করতে হচ্ছে ২০-২৫ হাজার টাকায়।
বীরগঞ্জ উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মহেশ চন্দ্র রায় পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে দুর্গোৎসব পালনে মন্ডপে মন্ডপে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় বাসন্তী পূজাসহ ১৬৩ টি মন্ডপে পূজা হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষে জানা যাবে কয়টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।