কাজী স্বাধীন ” স্টাফ রিপোটার : সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গত অক্টোবর মাসে এক মিটিংয়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নওগাঁর ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’-এর পরিচালক ও চেয়ারম্যান। কিন্তু ১২ নভেম্বর ভূঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে রাতের আঁধারে সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রাহকের অন্তত ৬০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান তারা।
গ্রাহকের ছয়শ’ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করে নওগাঁ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। রোববার সকালে বগুড়া থেকে তাকে আটক করা হয়। এর আগে শনিবার মামুনুর রশিদ মামুনের স্ত্রী, ভাগ্নি-জামাই ও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (এমডি) নাজিম উদ্দিন তনুর বোন সুফাকে আটক করে পুলিশ। নাজিম উদ্দিন তনু নওগাঁ শহরের জগৎসিংহপুর মহল্লার বাসিন্দা। এদিকে মামুনুর রশিদ মামুন আটক হওয়ার খবর জানার পর প্রায় দুশ’ ভুক্তভোগী রোববার দুপুরে নওগাঁ সদর থানার সামনে জড়ো হন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী তাদেরকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠান। জানা যায়, নওগাঁ শহরের খাঁস-নওগাঁ পোস্ট অফিস পাড়ায় কয়েক বছর থেকে বেসরকারি সংস্থা ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি জামানতকারীদের লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা (লাভ) দিত। জেলার ১১টি উপজেলায় এই প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে।
উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গ্রামের সহজ-সরল শত শত মানুষ কোটি কোটি টাকা আমানত রাখে। এভাবে ভূঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এদিকে দু’মাস আগে গ্রাহকদের মুনাফা দেয়া বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। এর মাঝেও সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী (এমডি) নাজিম উদ্দিন তনু কৌশলে গ্রাহকদের ডিসেম্বর মাস থেকে মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন।
কিছুদিন আগে শহরের সরিষাহাটির মোড়ে প্রতিষ্ঠানটির একটি শাখা বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ পাওয়ায় শাখার শত শত গ্রাহক দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। মুনাফা না পেয়ে কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীরা বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করেন। শত শত গ্রাহক প্রতিদিন সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আদৌ টাকা পাবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গ্রাহকরা। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যরা মামুনুর রশিদ মামুনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামুনুর রশিদ মামুন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। আগে তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে এনজিও’র সঙ্গে যুক্ত হন। তার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। কোন যোগ্যতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি জানেন না।
‘এছাড়া কত টাকা সংস্থায় জমা আছে সেটাও তিনি জানেন না। এমন একজন মানুষ কিভাবে চেয়ারম্যান হতে পারে আর গ্রাহকরা কিভাবে কোন ভরসায় এতো টাকা রাখে তা আমার বোধগম্য নয়।’সাধারন গ্রাহকদের দাবী তারা এই মুহূর্তে লাভের টাকার আশা না করে মুল আমানতের টাকা ফেরন চাইছে যাতে করে সেই টাকা নিয়ে নেরেচেরে তাদের সংসারের খরচা চালাতে পারে। এবং তাদের টাকা কি ভাবে ফেরত পাবেন সেই ব্যপারে আইন শৃংখলা বাহিনীর সহায়তা কামনা করছেন।