1. admin@weeklyjagrotojanata.com : admin :
গোপালগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক কে? - জাতীয় সাপ্তাহিক জাগ্রত জনতা
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
চালাষ ক্রীড়া চক্র ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪ এর প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক কে? খুলনায় ওজোপাডিকো’র প্রধান কার্যালয়ে দুদকের অভিযান নড়াইলের লোহাগড়ায় ৫৩ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার ১ খুলনার পাইকগাছায় বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ ও কারেন্ট জাল জব্দ করা করেছে যশোরের মনিরামপুর শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদে বন্যার্তদের মাঝে জি আর চাউল বিতরণ কাশিয়ানীতে চিকিৎসার নামে প্রতারনা জরিমানা ১০ হাজার টাকা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ধনবাড়ী থানা পুলিশ বড়দিন উপলক্ষে বান্দরবান সেনা জোনের পক্ষ হতে উপহার সামগ্রী বিতরণ করলেন -জোন কমান্ডার মাহমুদুল হাসান নাগরিক সেবা এ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করলেন- অধ্যাপক থানজামা লুসাই

গোপালগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক কে?

জাগ্রত জনতা ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

শেখ মোঃ ইমরান স্টাফ রিপোর্টার : গোপালগঞ্জ জেলা শহরের কাঁচাবাজারে জেলা বিএনপির নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়।

গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির দুই কার্যালয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার মধ্যে আরো একটি জেলা বিএনপির কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলা শহরে মাত্র এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে জেলা বিএনপির তিনটি কার্যালয় হল।

তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, রবিবার (২২ ডিসেম্বর) উদ্বোধন করা এ অফিসটিই জেলা বিএনপির আসল কার্যালয়। সকল নেতাকর্মীকে এ কার্যালয়ে এসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

রবিবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের কাঁচাবাজারে নতুন ভবনের ২য় তলায় জেলা বিএনপির নতুন এ কার্যালয় উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. কেএম বাবর, তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক, জিয়াউল কবির বিপ্লব, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহীদুল ইসলাম লেলিন, পৌর বিএনপির সভাপতি হাসিবুর রহমান হাসিব, জেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন লিপটন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরাসহ অনেকেই উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা বলেন, “যারা অফিস খুলে বসেছেন এগুলো তাদের ব্যক্তিগত অফিস যা কোনোভাবেই বিএনপির কার্যালয় নয়। তারা বিএনপিতে জায়গা নিতে অফিসের নামে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আজ যে অফিসের উদ্বোধন হলো এটা বিএনপির মূল কার্যালয়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাভোকেট তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, “কোনো অফিস করতে হলে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের থাকতে হবে। কিন্তু ওই দুটি অফিসে কোনো নেতাকর্মী যায় না। আজ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ অফিসটির উদ্বোধন করলেন, তাই এটাই বিএনপির মূল কার্যালয়। কেউ ব্যক্তিগত অফিস খুলে বসলে সেটা বিএনপির কার্যালয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই নেতাকর্মীদের দ্বিধায় না পড়ে মূল অফিসে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ওই দুই দলের সুবিধা নিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসিত করতেই বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে তারা ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা কার্যালয় দাবি করছে এটা ঠিক নয়। আজ নতুন অফিস উদ্বোধন করা হলো। এখন থেকে এটাই হবে বিএনপির মূল অফিস। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এখান থেকেই পরিচালিত হবে।

এর আগে জেলা বিএনপির সাবেক সাভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু তার বাস ভবনে ও অপর সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ শহরের গেটপাড়ায় অফিস খুলে জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবি করেন।

এতে গোপালগঞ্জে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে তৃণমূলের বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলা শহরে মাত্র এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তিনটি অফিস খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অফিস দুটি। সে দুটি অফিসও জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবি করা হচ্ছে। ওই দুটি কার্যালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বহিষ্কৃত ও পদত্যাগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও এম এইচ খান মঞ্জু।

এদিকে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে আক্ষেপ করছেন নেতা-কর্মীরা। এতে জেলায় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়ছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরাও। এতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ওই দুই নেতার রাজনীতি সমর্থন করছেন না নেতাকর্মীরা।

এর আগে ২০১৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে ওই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে গোপালগঞ্জে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গোপালগঞ্জ থেকে বিএপির অফিস বিলুপ্ত হয়ে যায়।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বহিস্কৃত নেতা এম এইচ খান মঞ্জু। গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের লঞ্চঘাট এলাকায় তার তিনতলা বিশিষ্ট ভবনকে জেলা কার্যালয় দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন।

এদিকে, ১৭ বছর পর গোপালগঞ্জ জেলা শহরের গেটপাড়ায় একটি টিনের ঘরে বিএনপি জেলা কার্যালয় দাবি করে অফিস উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। এই দুইটি কার্যালয়ের মাঝখানের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার।

গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির এই দুই কার্যালয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরাও। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলা বিএনপির বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাস্বেক দলের সভাপতি এসএম জিলানী বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্, জেলা বিএনপির সাবেক সাপতি এম এইচ খান মঞ্জু, সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক সভাপতি এম এইচ শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর অপর চারটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মূলত এ কারণেই নেতাকর্মীদের মধ্যে এই বিভেদ দেখা দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, “জেলা কার্যালয় হচ্ছে সেটি যেখানে সভাপতিসহ কমিটির সবাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু তারা দুজনই ৫ তারিখের পর গোপালগঞ্জ এসে অফিস দুটি খুলে বিএনপির জেলা কার্যালয় দাবি করছেন। তাদের এই দাবি আমরা সমর্থন করি না এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

গোপালগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন সিকদার বলেন, ৫ আগস্টের আগে যেসব নেতাকর্মী রাজপথে ছিলাম, তারা কেউই ওই দুই নেতার রাজনীতি সমর্থন করি না। তারা যে কার্যালয় খুলে বসেছেন, সেখানে আমরা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ যাই না। এক কথায় বলা যায় তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবি করছেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা বলেন, “জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু ও সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ দলের বহিষ্কৃত নেতা। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৭ বছরে তারা বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। বহিষ্কৃত নেতা হওয়ায় তারা দলের কেউ না। জেলা কার্যালয় হতে গেলে দলের আহ্বায়কসহ অন্যান্য নেতাদের থাকতে হবে। ফলে তারা যে অফিস খুলেছে এগুলো বিএনপির জেলা কার্যালয় নয়। তাদের ব্যক্তিগত কার্যালয়।

তিনি আরও বলেন, দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। তবে কারো ব্যক্তিগত পছন্দ থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাস্বেক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর নেতৃত্বে বিএনপি এক ও অভিন্ন। তাদের নেতৃত্বে বিএনপি এগিয়ে যাবে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাভোকেট তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, “তারা যে অফিস খুলে বসেছে এটা বিএনপির কোনো কার্যালয় নয়, এটা তাদের ব্যক্তিগত অফিস। এটাকে তারা জেলা বিএনপির কার্যালয় দাবি করলে তা হয়ে যাবে না। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় জেলা বিএনপির কার্যালয় পরিচালিত হবে।

দলীয় গ্রুপিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কোনো গ্রুপিং বা কোন্দল নেই। এখানে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। কমিটির নিদের্শনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। কেউ যদি বলে থাকে তিনি একটি গ্রুপ পরিচালনা করছে তবে সেটা ভুল।

এ বিষয় জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, “আমি বিগত দুইবারে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলাম। জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলাম। তবে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি আমার পছন্দ হয়নি, যে কারণে আমি ওই কমিটি নিয়ে অনাস্থা দিয়েছি। তবে পদত্যাগ করিনি। আর বিগত কয়েক বছরে মামলা হামলার জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপির কোনো কার্যালয় রাখা সম্ভব হয়নি। গত ১৬ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। এই কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হয়েছে। আগামী দিনে আবারও আমি সভাপতি হব। এটি দলের হাইকমান্ড থেকে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তখন আর এ অফিস নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না।

তবে এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ওই দুই নেতা বিগত সরকারের নানা সুবিধা নিয়েছে। তারা উভয়ই আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতেন। গত কয়েক বছরে বিএনপির বিভাগীয় কোনো প্রোগ্রামে তাদের পাওয়া যায়নি। এখন তারা দলের সুবিধা নিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসিত করতেই বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অফিস খুলে জেলা কার্যালয় দাবি করছেন।

তিনি আরও বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে আহ্বায়ক কমিটিই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু তাদের অফিসে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি বা জেলা বিএনপির সহযোগী কোনো সংগঠন যায় না। তাহলে কীভাবে ওই দুটি ব্যক্তিগত অফিস জেলা কার্যালয় হয়? তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অফিস খুলে যদি জেলা কার্যালয় দাবি করে, তাহলে সেটি জেলা বিএনপি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে। তাদের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর