ইয়োগা বা যোগাসন শারীরিক ও মানসিক অবসাদ কাটিয়ে তুলতে যেমন কার্যকরী, তেমনি ফলদায়ক রোগ থেকে মুক্তি লাভেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে ওষুধের বিকল্প হিসেবে যোগাসনের অভ্যাস করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
যোগাসনের অর্থ হলো শরীরের সমস্ত অংশকে প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ করা। এর ফলে শরীরের চালনা ও উৎফুল্লতা বজায় থাকে। নিয়মিত এ অভ্যাসে প্রাকৃতিক উপায়ে শারীরিক গঠন সুগঠিত হয় এবং শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
যোগাসনে অসংখ্য আসন রয়েছে যা শরীর ফিট রাখে ও নির্দিষ্ট কিছু রোগের মুক্তি ঘটায়। তাই আসুন এক নজরে জেনে নিই কোন রোগ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত কোন যোগাসনের উপর জোর দেবেন-
১। মস্তিষ্ক ও হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে: মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নিয়মিত শীর্ষাসনের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। আর হার্টজনিত নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনুশীলন করতে পারেন শশকাসন, অপান বায়ু মুদ্রা, অনলোম- বিলোম প্রাণায়াম।
২। হজমের সমস্যা: অনিয়ন্ত্রিত জীবনে আমাদের প্রায় সবারই হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে পবনমুক্তাসন বা সুপ্ত বজ্রাসন করা যেতে পারে। পবনমুক্তাসনে চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা ভাঁজ করে পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে। বাঁ পা তখন সোজা থাকবে। এরপরে একইভাবে বাঁ পা ভাজ করে পেটে লাগতে হবে। ডান পা তখন সোজা থাকবে। নিয়মিত এভাবে যোগাসন করার ফলে গ্যাস, অম্বল, হজমের সমস্যাসহ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করা যায়।
৩। কোমরের যন্ত্রণা: কোমরজনিত বিভিন্ন রোগ ও এর যন্ত্রণা কমাতে ভুজঙ্গাসন একটি আদর্শ স্থান। এই আসন করার সময় আপনার শারীরিক ভঙ্গি দেখতে অনেকটাই সাপের মতো হবে। এই আসন ছাড়াও উপুড় হয়ে শুয়ে এক পা উপরে তুলে একপদ সলভাসন বা পবনমুক্তাসন করলেও ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
৪। হাঁটুর ব্যথা: যারা হাঁটুর ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তারা হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য উত্থান পদাসন করলে উপকার মিলবে। চেয়ারে বসে পা তোলা ও নামানো অর্থাৎ সিটেড লেগরাইজও ভারী কাজে আসতে পারে। শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে উপরের দিকে পা তোলা নামা বা পেলভিস ব্রিজও করতে পারেন। এতে থাইয়ের পেশি সংকুচিত বা প্রসারিত হয়ে হাঁটুর ব্যথাকে সারিয়ে তুলবে।
আরও পড়ুন: রক্ত দেয়ার আগে করণীয়
৫। কাঁধ ও ঘাড়ের যন্ত্রণা: কর্মব্যস্ত জীবনে বসে বসে কাজের অভ্যাসে অনেকেই এখন ঘাড় ও কাঁধের সমস্যায় ভুগেন। ঘাড়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য আইসোমেট্রিক প্রেসার অভ্যাস করতে পারেন। এর জন্য দু’হাত মাথার পিছনে নিয়ে মাথাকে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করে চাপ দিতে হবে। এভাবে মাথাকে চার দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিন। চিৎ হয়ে শুয়ে ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করলেও কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যথা দূর করা যায়।
৬। পেট ও নিতম্বের চর্বি কমাতে: দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক পরিশ্রম কম হওয়ায় অনেকেরই পেট ও নিতম্বের আশেপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেখা যায়। এই সমস্যা সমাধানে অর্ধকূর্মাসন খুবই কার্যকরী। এই আসনটি নিয়মিত অনুশীলন করতে প্রথমে মাটিতে বজ্রাসনে বসুন। মাথা মাটিতে ঠেকান। এইবার হাত দুটি সোজা করে একসঙ্গে জড়ো করে মাথার ওপরে তুলুন নমস্কারের ভঙ্গিতে। খেয়াল রাখবেন এসময় যেন পেট ও বুক ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকে। এই অবস্থায় ২০ মিনিট থাকার পর ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
আরও পড়ুন: ফুসফুস ভালো রাখে যেসব ফল
৭। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা: হাঁপানি বা শ্বাসজনিত সমস্যায় সিদ্ধাসন নিয়মিত অনুশীলন করতে পারেন। এর জন্য মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। এই আসন দেখতে অনেকটাই পদ্মাসনের মতো। সিদ্ধাসনে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।
৮। মেরুদণ্ডজনিত সমস্যা: হরমোন বা বংশগত সমস্যার জন্য অনেকেরই শারীরিক উচ্চতা বেশি হয় না। তাই যাদের উচ্চতা কম তারা অল্পবয়স থেকেই করতে পারেন সর্বাঙ্গাসন, তাড়াসন, উষ্ট্রাসন এবং বৃক্ষাসনের মতো আসনগুলো। এসব আসন মেরুদণ্ডকে সুগঠিত করে। সেই সঙ্গে নমনীয় করে উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মো: গোলাম কিবরিয়া / বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ধীরেন্দ্র প্লাজা (৫ তলা), কলেজ গেইট, টঙ্গী, গাজীপুর। মোবাইলঃ 01785465360
Copyright © 2024 জাতীয় সাপ্তাহিক জাগ্রত জনতা. All rights reserved.